কিভাবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায়

কিভাবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায়: ফেসবুক বিনোদনের একটা প্লাটফর্ম হলেও এটিকে ঘিরে আয়ের বিভিন্ন উৎস সৃষ্টি হয়। ফেসবুক থেকে আয় করতে ইচ্ছুক হলে এটি আপনার জন্যই..

ফেসবুক যেহেতু একটি সোসাল মিডিয়া প্লাটফর্ম তাই এখানে হিউজ পরিমানের ট্রাফিক রয়েছে। আর যেখানেই ট্রাফিক, লোক সমাগম সেখানেই রয়েছে আয়ের উৎস।

তার পেক্ষিতেই বেশ কিছু উপায়ের সৃষ্টি হয় ফেসবুক থেকে আয় করার। আপনাকে জাস্ট একটু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আপনিও পারবেন, অবশ্যই পারবেন। কৌশন গুলো আজ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। দেখে নিন ফেসবুক থেকে ইনকাম করার উপায়গুলো।

ফেসবুক থেকে ইনকাম

★ ফেসবুক পেজ মনিটাইজ করে আয়

 

প্রথমেই ফেসবুক মনিটাইজেশন নিয়ে বলি কারন এই উপায়ে সয়ং ফেসবুক আমাদের Pay করে থাকে। এটা ইউটিউব মনিটাইজেশনের মতই তবে ইনকাম করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। সহজ বলছি কারন ইউটিউবে গুগলের কন্ডিশন থেকে কিছু দিক দিয়ে মনিটাইজড করা সহজ ও বেশি পে করে থাকে।

মনিটাইজেশনের কিছু শর্ত আছে। আপনি এক এক করে শর্ত পূরন করতে থাকলে এবং সব গুলো শর্ত কমপ্লিট হলে আয় শুরু। চলুন শর্ত গুলোর বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

Follower : বলে রাখা ভালো যে, আইডি বা একাউন্ট থেকে মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আয় করা যায় না। এর জন্য অবশ্যই ফেসবুক পেজ থাকতে হবে। এটা হলো প্রথম ধাপ।

এবার খুশি হয়ে গিয়ে পেজ ক্রিয়েট করে ভাবলেন মনিটাইজেশন পেয়ে যাবেন তাহলে ভুল করবেন। পেজের সাথে একটা শর্ত জুরে দেয়া আছে। যে পেজ এর ফলোয়ার ১০,০০০+ হবে সেই পেজ মনিটাইজেশনের জন্য ইলিজিবল (Eligible)

Number of View : প্রথম ধাপ পার করে মনিটাইজেশন এপ্লাই অন করার পর থেকে শুরু করে ৬০ দিনে ৩০ হাজার ভিউ হতে হবে আপনার আপলোড করা ভিডিওতে।

তবে কয়টা ভিডিওতে সেটা কোনো ব্যাপার না। আপনি একটা ভিডিওতে ৩০ হাজার ভিউ হলেও হবে বা ১০০ ভিডিওতে। তবে কন্ডিশন এই যে ৬০ দিনে ৩০০০০ ভিউ হওয়া চাই।

Video Runtime : আপনার আপলোড করা ভিডিওটি অবশ্যই মিনিমাম ১ মিনিট হতে হবে পাশাপাশি ভিডিও এর এক তৃতীয়াংশ দেখতে হবে। এক্ষেত্রে ধরা যায় ভিডিও যদি ৩ মিনিট হয় তাহলে ১ মিনিট দেখতে হবে। আর এমন করেই এক লাখ ৮০ হাজার ওয়াচ টাইম লাগবে।

Video Quality : অবশ্যই কোয়ালিটি ম্যাটার করবে। কপিরাইট বিহীন ভিডিও হতে হবে এমনকি কোথাও থেকে ডাউনলোড করা ভিডিও আপলোড করলে হবে না। ভিডিও একান্ত আপনার নিজের তৈরি হতে বে এবং সম্পুর্ন ইউনিক। আপনার করা ভিডিও এর মাঝে কিছু সময় মিউট রাখতে হবে। মানে কোনো কথা বলা যাবে না। ফেসবুক ওই মিউট (mute) সময়টায় মাঝেই এড দিয়ে থাকবে।

★ ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল লিখে আয়

এটিও ফেসবুক মনিটাইজেশন এর অন্তর্ভুক্ত তবে এবার একটু ভিন্ন এর সাথে ভিডিও আপলোড করার কোনো সম্পর্ক নেই কারন এটা আর্টিকেল নির্ভর। এটাকে ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল বলে।

ইন্সট্যান্ট আর্টিকেল : মাত্র 5000 লাইক বা ফলোয়ার ওয়ালা পেজ হলেই ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল এর জন্য মনিটাইজেশন দিয়ে থাকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে একটি ব্লগের। যেখানে আপনি আর্টিকেল পাবলিস্ট করবেন।

এটি অনেকটা গুগোল Ads এর মতই তবে এখানে বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। প্রথম ভিন্নতা এই যে এটি কেবলমাত্র মোবাইল ফোনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ওয়েবসাইট বা ব্লগ হতে হবে মোবাইল ফ্রেন্ডলি এবং AMP ভার্সনের।

কিছু অসুবিধা আছে অবশ্য। এক্ষেত্রে google ads বসাতে পারবেন না যদি আপনি ফেসবুক ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল এর মাধ্যমে মনিটাইজেশন করেন। Google Ads এ যেমন আপনি নিজের পছন্দমত যেকোনো জায়গায় একাধিক ads বসাতে পারতেন সেটা পারবে না। ফেসবুক নিজ থেকে তার পছন্দ মোতাবেক ads আপনার ব্লগে পাবলিস্ট করবে।

ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল এর জন্য আপনি গুগলের ব্লগার প্লাটফর্মে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট বা ব্লগ ক্রিয়েট করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে শুধুমাত্র একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং ফ্রি পাচ্ছেন ব্লগার প্লাটফর্ম থেকে। তবে অবশ্যই ব্লগটি AMP ভার্সনের হতে হবে।

★ এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়

আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে কোথাও-না-কোথাও অবশ্যই শুনে থাকবেন কারণ বর্তমানে খুব বেশি ট্রেন্ডিং অবস্থা আছে এটি। এবং এটির মাধ্যমে সত্যি দারুন পরিমানে আয় করছে সবাই। এবার প্রশ্ন হল ফেসবুকের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করবেন?

তবে যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে প্রোপার জ্ঞান নেই তাদের জন্য বলছি এফিলিয়েট মার্কেটিং হল সেই মার্কেটিং যেখানে অন্যের পন্য বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমে আয় করা যায়।

সচারাচর এফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট বা ব্লগে করা হলেও বর্তমানে ফেসবুক একটা ভালো প্লাটফর্ম হয়ে দাড়িয়েছে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য।

আপনার কাজ হবে বিভিন্ন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম গুলোতে সাইন আপ করা এবং সেই প্রোডাক্ট গুলো আপনার ফেসবুক পেজে ক্রিয়েটিভ ভাবে প্রোমোট করা। যদি কেউ আপনার পেজ থেকে গিয়ে তাদের পন্য কিনে থাকে তাহলে তারা আপনাকে নিদিষ্ট পরিমানের অর্থ দিবে। আর সব চেয়ে দারুণ বিষয় হলো এটি প্যাসিভ ইনকাম আজীবন হতে পারে। 

★ ফেসবুক শপে প্রোডাক্ট সেল করে আয়

আপনি কি এ বিষয়ে অবগত যে ফেসবুকে অন্য সব ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও অ্যাপ এর মত পণ্য কেনাবেচা করা যায়? রিসেন্টলি ফেসবুকে যুক্ত হয়েছে ফেসবুক শপ এখানে আপনি যে কোন কিছু বিক্রি করার জন্য পোস্ট করতে পারেন এবং সেখান থেকে কিনতে পারেন।

এবার বলি আপনি এই ফিচার্সটি ব্যবহার করে কিভাবে ইনকাম করবেন। আপনি বিভিন্ন ক্রয় বিক্রিয় প্লাটফর্মে একাউন্ট করবেন। সেখান থেকে পুরোনো পন্য বা নতুনই হোক না কেনো! সেটার সম্পুর্ন ডিটেইলস কালেক্ট করে ফেসবুক শপে আপলোড করবেন।

যখন কোনো গ্রাহক পন্যটি কিনতে ইচ্ছুক হবে তখন আপনি তার ইনফরমেশন ওই সেলারকে পাঠাবেন যার থেকে সব ইনফরমেশন নিয়েছেন। আর মাঝে সেতুবন্ধন করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মুনাফা পেতে পারবেন। এটা তো কেবল একটা উদাহরণ মাত্র, বিভিন্ন কৌশল খাটিতে এখানেও আয় করতে পারবেন।

★ ফেসবুক এডস থেকে আয়

ফেসবুকে এডস দিয়ে কিভাবে আয় করবেন সেটা বলছি তবে তার আগে জেনে রাখুন ফেসবুকে এডস দেয়াটা ব্যয়বহুল। আপকে এডস দিতে কিছুটা খরচ করতে হবে। এবার মূল পয়েন্টে যাওয়া যাক।

আপনি একটা বা একাধিক প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসায় করছেন। এক্ষেত্রে আপনার গ্রাহক তারাই যারা এটার সাথে সংযুক্ত রয়েছে। আপনি আপনার ফেসবুক পেজ এর মাধ্যনে প্রতিদিন ১০ টি গ্রাহককে পন্য কেনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারছেন। এখান একটু ভাবেব ১০ জন ক্রেতা পেয়েছেন কতজনের মধ্যে? ১০০, ৫০০, ১০০০, ৫০০০? সংখ্যা যেটাই হোক মূল কথা হচ্ছে যত জন লোকের কাছে আপনার প্রোডাক্টি পৌছাবে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি হওয়ার চান্স তত বেশি বাড়বে। আর এখানেই ফেসবুক এডস এর কাজ শুরু।

আপনি অবশ্যই এটি মানেন যে বর্তমানে সব চেয়ে বেশি জনপ্রিয় সোসাল মিডিয়া সাইট ফেসবুক আর প্রতিদিন লাখ লাখ ভিজিটর দ্বারা সচল থাকা এই প্লাটফর্মে আপনি যদি কিছু নিয়ে আসেন তাহলে অবশ্যই তারা দেখবে। আর তারা দেখার জন্যই ফেসবুকে আসছে। যেখানেই ট্রাফিক, সেখানেই বিক্রি তাই বেশি ট্রাফিক পেতে বেশি ফেসবুক এডস দিন।

★ ফেসবুক এডস ম্যানেজারে ফ্রিল্যান্সিং

ফেসবুক এডস এর সুবিধা তো বললাম তবে ফেসবুক এডস কিভাবে দিবেন। আবার দিলেই তো হলো না সেটাকে প্রোফেসনাল লুকে উপস্থাপন করতে হবে যাতে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়।

এবার যেহেতু সবাই এটা করতে পারে না, পারলেও প্রোফেসনালের মত হয় বা অথবা পর্যাপ্ত সময় থাকে না অনেকের কাছে। তাই তারা ফেসবুক এডস স্পেশিয়ালিস্টদের Hire করে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারণা চালায়।

তাহলে সেই প্রোফেশনালটা আপনি কেনো হচ্ছেন না? আজকাল ফ্রি ও পেইড বিভিন্ন কোর্স রয়েছে ফেসবুক এডস বিষয়ক। সময় দিক, শিখে ফেলুন আর লং টাইমের জন্য আয়ের পথ তৈরি করুন।

পরিশেষে বলা যায়, এটা ছিলো ইউনিক কিছু আইডিয়া যেভাবে আপনি ফেসবুক নামক সোসাল মিডিয়া প্লাটফর্ম থেকে আয় করতে পারেন।

 

Read More:

Leave a Comment