ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো 2024

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?

আজকাল অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ঝুঁকছে। সবাই ফ্রিল্যান্সিং শিখে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে চাচ্ছে। তবে তাদের অধিকাংশই আবেগের বশে এই দিকে আগ্রহ দেখানোর ফলে, কম সময়ে আয় না করতে পেরে হতাশ হয়ে যাচ্ছে।

আবার অনেকেই বিভিন্ন সময়ে গুগলে কিংবা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে এসে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো সহ অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। তবে গুগলের গতানুগতিক উত্তরে অনেকাংশই মানসম্মত উত্তর পাচ্ছে না। তাই আমরা আজকে আপনাদের সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তর দিব। তবে তার আগে একটু জেনে নেই ফ্রিল্যান্সিং জিনিসটা কি।

ফ্রিল্যান্সিং কি
ফ্রিল্যান্সিং কি

ফ্রিল্যান্সিং কি

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে যেকোন কাজ স্বাধীনভাবে করে দেয়া। কি জটিল লাগছে? আসুন একটু ভেঙ্গে বলি। যেকোন কাজ কোন কোন কোম্পানি কিংবা কোন থার্ড পার্টির অধীনে না করে, নিজের সময় মত স্বাধীনভাবে ডিরেক্টলি ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করাকেই ফ্রিল্যান্সিং।

ধরুন যেকোন একটি কোম্পানি বা একজন মানুষ তার একটি প্রজেক্টে কাজ করার জন্যে আপনাকে হায়ার করলেন। না কোন চাকরি না, আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করার জন্যেই হায়ার করলেন। মানে হচ্ছে, আপনি ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি করে দিবেন। এর জন্যে না আপনাকে ক্লায়েন্টের অফিসে যাওয়া লাগবে, আর না দিনের নির্দিষ্ট সময় ধরে কাজ করতে হবে। আর এই সুবিধার জন্যেই মানুষ এখন ফ্রিল্যান্সিংএর প্রতি ঝুঁকছে।

এই হল অল্প কথায় ফ্রিল্যান্সিং, এখন আসুন জেনে নিই ফ্রিল্যান্সিং শেখার রোডম্যাপটা জেনে নিই।

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?

এবার আমরা আমাদের মূল আলোচনা তথা, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো সেটা জানবো। আমরা আমাদের লেখাটি কয়েকটা ভাগে ভাগ করবো যাতে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয়। আসুন আমরা আর দেরি না করে আমাদের আলোচনা শুরু করি।

বেসিক জ্ঞ্যান অর্জন

ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে বেসিক জ্ঞ্যান অর্জন করা। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, অনলাইন কমিউনিকেশন, ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা, ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞ্যান অর্জন করা। আসলে আমাদের দেশে মানুষ এখন শুধুমাত্র অনলাইনেই ফ্রিল্যান্সিং করে থাকে। তবে বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে এখন কিছু কিছু কাজের জন্যে মানুষ ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

তবে দুই অনলাইন কিংবা অফলাইন যেকোন ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে আপনাকে এই বেসিক বিষয়গুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। এই জ্ঞ্যান ছাড়া আপনি এই নির্দিষ্ট টাইপের ক্যারিরার লাইনে উন্নতি করতে পারবেন। আসুন আমরা পরের পদক্ষেপটি জেনে নিই।

নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন

বেসিক জ্ঞ্যান অর্জনের পরে আপনার জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নির্দিষ্ট যেকোন একটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলা। ফ্রিল্যান্সিং ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি একই সাথে অনেকগুলো বিষয়ে দক্ষ হতে পারবেন না। যদি পারেনও, ক্লায়েন্ট আপনাকে বিশ্বাস করবে না সব কাজের জন্যে। সুতরাং আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে অনেক বেশী দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাহলে ক্লায়েন্ট পেতে আপনার খুব একটা কসরত করতে হবে না।

আর এই দক্ষতা অর্জন করার ক্ষেত্রে আপনাকে এমন একটি বিষয় পছন্দ করতে হবে যেটা করতে আপনার ভাল লাগে। ধরুন আপনার ছবি তুলতে ভাল লাগে, এখন আপনি যদি নিজেকে ছবি তোলায় পারদর্শী করে তুলতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক ভাল করতে পারবেন। মনে রাখবেন, যে বিষয়ই বেছে নেন না কেন, মন থেকে ভালবেসে কাজটি করতে হবে। এবার আসুন পরের পদক্ষেপ জেনে নিই।

নিয়মিত চর্চা করা

দক্ষতা অর্জনের পরে আপনার প্রধান কাজ হচ্ছে, নিয়মিত চর্চা করা। এই চর্চা করতে থাকাটা কতদিন যাবৎ করতে হবে, সেটার কোন নির্দিষ্ট লিমিট নেই। আপনাকে ধৈর্য্য ধরে কাজের চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। এই চর্চা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর একটা কথা আপনাকে জানতে হবে যে, রাতারাতি এই ইন্ডাস্ট্রিতে সফল হওয়া যাবে না।

চর্চা আর ধৈর্য্যশীলতার সাথে কাজ শিখতে থাকা আর নিজেকে দক্ষ করে তোলা ছাড়া কোন উপায় নেই। এই কাজ শিখতে শিখতে একসময় আপনি নিজেই নিজের দক্ষতা বুঝতে পারবেন। আসুন এবার পরের পদক্ষেপটি জেনে নিই।

ডেমো কাজ করতে থাকা

চর্চা করতে থাকা অবস্থায় যখন আপনি নিজের দক্ষতা বুঝতে পারবেন, তখন আপনার ডেমো কাজ করতে থাকতে হবে। আপনি অনলাইনে অনেক প্ল্যাটফর্ম পাবেন যেখানে আপনি নিজের ডেমো কাজ করে প্রদর্শনীর জন্যে রেখে দিতে পারবেন। যেকোন টাইপের দক্ষতার জন্যে ফেসবুক কিংবা অন্যান্য টপিক রিলেটেড প্ল্যাটফর্ম খুঁজে সেখানে নিজের করা কাজ জমা দিয়ে রাখতে পারবেন।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট টপিকে দক্ষতা দেখানোর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আপনি চাইলেই সেইসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের দক্ষতা দেখাতে পারেন। এছাড়া এইসব প্রতিযোগিতায় আপনি যদি কোন এওয়ার্ড কিংবা পুরষ্কার পান তাহলে সেগুলো আপনার পোর্টফোলিওতে দেখাতে পারবেন।

প্রফেশনাল কাজের জন্যে আবেদন করা

এবার আসল কাজ। হ্যাঁ, কাজ শিখলেন, দক্ষতা অর্জন করলেন, চর্চা করলেন, এবার দক্ষতা ব্যবহার করে টাকা অর্জন করার পালা। আচ্ছা একবার দেখে নিই, কি কি করেছি আমরা এই পর্যন্ত। আমরা বেসিক জ্ঞ্যান অর্জন করেছি, তারপর দক্ষতা অর্জন করেছি এবং চর্চা করেছি। আর তারপর ডেমো কাজ করে বিভিন্ন জায়গায় সাবমিট করে রেখেছি। আর আমরা ওইসব জায়গায় নিজেদের ডেমো কাজ জমা দিয়েছি, যেখানে ক্লায়েন্টরা তাদের প্রজেক্টের জন্যে ফ্রিল্যান্সার হায়ার করেন।

এছাড়া, ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকমের মত প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে আপনি নিজের নামে একাউন্ট ক্রিয়েট করে আপনার কাজ প্যাকেজ আকারে রাখতে পারবেন। যেকোন মানুষ সেখানে আপনার দক্ষতা জেনে আপনাকে হায়ার করার জন্যে যোগাযোগ করবে।

এছাড়া মানুষ সেখানে জব পোস্ট করে থাকে, আপনি সেই সব জবের জন্যে আপনার আবেদনপত্র জমা দিতে পারেন। আর যদি ক্লায়েন্ট আপনার প্রপোজাল পছন্দ করেন, তাহলে আপনাকে ইন্টার্ভিউ নিয়ে আপনাকে হায়ার করবেন।

নিজেকে দক্ষ করার প্রক্রিয়া চালু রাখা

ফ্রিল্যান্স করতে গেলে নিজেকে সব সময় দক্ষতা উন্নয়নের কাজ চালিয়ে রাখতে হবে। নিজেকে দক্ষতার ভিত্তিতে বিভিন্ন টেকনোলজি সম্পর্কে আপডেটেড রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে সবকিছুই দ্রুততার সাথে আপডেট হচ্ছে, এবং সেই সাথে আপনাকেও আপডেটেড রাখতে হবে। তাহলেই আপনি ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে বিভিন্ন প্রোজেক্টে কাজ করার জন্যে প্রস্তুত থাকতে পারবেন।

এইতো গেলো রোডম্যাপ কেমন হবে সেই বিষয়ের আলোচনা। এবার সচারাচর যেসকল প্রশ্ন গুলো করা হয় সেই গুলো নিয়ে বলি।

ফ্রিল্যান্সিং কোথায় শিখব?

যেহেতু এটি কোনো স্পনসর আর্টিকেল না তাই নিদিষ্ট করে কোনো প্লাটফর্মের কথা উল্লেখ করবো না। কিছু টিপস দিবো যেটার মাধ্যমে আপনি আপনার জন্য সঠিক উপায়টি বেছে নিতে পারবেন।

প্রথমত, আপনাকে দেখতে হবে আপনি কোন ক্ষেত্রে বেশি প্রোডাক্টিভ। প্রোডাক্টিভ বলতে বুজিয়েছি সক্ষমতাকে আপনি কি কোনো কাজ করা বা কাজে মন দেয়ার ক্ষেত্রে অফলাইনে সেটা ভালো পারেন নাকি অনলাইনে?

যদি অফলাইনে কোনো কাজে ভালো ভাবে মন দিতে পারেন তাহলে পরামর্শ থাকবে নিকটতম কোনো আইটি ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে যেকোনো বিষয় ( আপনার যেটা ভালো লাগে ) কোর্স গ্রহন করুন। অনলাইনে শেখার ক্ষেত্রে চার্জ একটু বেশি হয়।

Note : অবশ্যই যেই আইটি সেন্ট্রারেই করেন না কেনো সেটা সম্পর্কে পূর্বে ধারনা গ্রহন করবেন।

আপনি যদি অনলাইন ক্লাস ভালো করতে পারেন, তাহলে বলবো আগে অনলাইনে কিছু শিখে নিন।অনেক প্লাটফর্ম আছে ফ্রি যা ব্যাসিকের জন্য একেবারে পার্ফেক্ট হবে। এক্ষেত্র আপনি গুগল, ইউটিউবের সহায়তা নিতে পারেন।

ব্যাসিক ক্লিয়ার হয়ে গেলে আপনি নিজেই বুজতে পারবেন কোন প্লাটফর্ম থেকে পেইড কোর্স করাটা ঠিক হবে। সেক্ষেত্রে আর কারো সাজেশন প্রয়োজন হবে না। তাই আর বললাম না। মূল কথা আগে ব্যাসিক ক্লিয়ার রাখুন।

ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন

সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন ইচ্ছা, তারপর ইন্টারেস্ট ও ধৈর্য। এই তিনটি গুন থাকলে আপনি যেই ডিভাইজ দিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়তেছেন সেটা দিয়েই শুরু করতে পারবেন।

তবে ভালো জ্ঞান ও প্রোফেশনাল কাজের জন্য অবশ্য একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ লাগবে। এমন অনেক কাজ আছে যেগুলোতে কম্পিউটার লাগে না, স্মার্টফোনই যথেষ্ট। এই ধরুন ডাটা এন্টি জব বা সিপিসি মার্কেটিং। এগুলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত।

ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার ও কাজের চাহিদা

বর্তমান থেকে শুরু করে ভবিষ্যত অব্দি যথেষ্ট ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে ফ্রিল্যান্সিংয়ে। কাজের চাহিদা কতটা এটা বুজতে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার.কম, ফাইভার এর মত প্লাটফর্ম এর ওয়েবসাইটে কেবল ঘুড়ে আসুন। যেকোনো একটা সেক্টর বেছে নিলেও এতো এতো কাজ আছে যা করা আপনার সক্ষমতার বাইরে। তাই কাজ নিয়ে চিন্তা করবেন না। ধৈর্য সহকারে শিখুন, কাজ এমনিতেই পাবেন।

উপসংহার

আমরা আমাদের আলোচনার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আশা করছি, উপরের স্টেপ বাই স্টেপ গাইড পড়ে আপনি এখন আপনি আপনার প্রশ্ন “ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?” এর উত্তর পেয়ে গিয়েছেন। সঠিকভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে উপরে দেখানো উপায়ে চর্চা এবং দক্ষতার উন্নয়ন করতে থাকুন, খুব শীঘ্রই আপনি প্রফেশনালি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে তৈরি হয়ে যাবেন।

 

Read More:

Leave a Comment