পাওয়ার ব্যাংক
সময় যতটা এগিয়ে যাচ্ছে , সময়ের পাশাপাশি মানুষও ততটাই প্রযুক্তি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে এখন প্রায়ই সবার হাতেই প্রযুক্তির ছোঁয়া চলে এসেছে। মানুষ এখন প্রযুক্তি ছাড়া এক সেকেন্ডও ভাবতে পারেনা। জীবন পরিচালনার জন্য সব ক্ষেত্রেই এখন প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে এখন প্রায়ই সবার হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। ছোট থেকে বড় এবং বড় থেকে বয়স্ক প্রায় সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। স্মার্টফোন ছাড়া আমাদের দেশের মানুষ কোন কাজই চিন্তা করতে পারে না। তাই বলাই যায় স্মার্টফোন আমাদের জীবন পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি।
বাংলাদেশে জীবন যাপনের মধ্যে লোডশেডিং একটি পরিচিত শব্দ প্রায়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষজন দিনে এবং রাতে বহুবার লোডশেডিং এর শিকার হয়ে থাকে। আর এই লোডশেডিং এর ফলে আমাদের স্মার্টফোনে সব সময় সম্পূর্ণ চার্জ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যার ফলে আমাদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়।
অনেক সময় আমরা এমন জায়গায় বেড়াতে যাই যেখানে আমাদের স্মার্টফোনের চার্জ ফুরিয়ে গেলে, চার্জ দেওয়ার কোন জায়গা থাকে না। জরুরী মুহূর্তে স্মার্টফোনের চার্জ না থাকার ফলে আমাদের পড়তে হয় বিপদের মুখে। যা মানব জীবন পরিচালনার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- Google Reader Revenue Manager কি? এটি কিভাবে কাজ করে?
- Oneplus Nord 3 5G Phone Review & Specifications 2023
- কোন মোবাইল সবচেয়ে ভালো ২০২৩
তবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে অসাধারণ কিছু প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি গুলো ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই আমাদের এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলতে পারি। এতে করে আমাদের জীবন পরিচালনার মান উন্নত হয়ে উঠবে উন্নত বিশ্বের সাথে।
হ্যাঁ আজ আমি পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে আপনাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক পাওয়ার ব্যাংক কি?
পাওয়ার ব্যাংক
পাওয়ার ব্যাংক হল বেশ কিছু ব্যাটারি দ্বারা তৈরিকৃত উন্নত আউটপুট প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্মার্টফোন জরুরি সময়ে চার্জ করে নিতে পারব। বিশেষ কিছু ইলেকট্রিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট এবং হাইভোল্টেজ ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে পাওয়ার ব্যাংক তৈরি করা হয়। পাওয়ার ব্যাংক সাধারণত আমাদের ফোনের ব্যাটারির পাওয়ার এর চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ক্যাপাসিটি প্রদান করা হয়।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক যে পাওয়ার ব্যাংক কিনার সময় কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের বিশেষভাবে লক্ষ্য করতে হবে? যেন পরবর্তীতে আমাদের অন্য কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।
নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন পাওয়ার ব্যাঙ্ক ক্রয় করার ক্ষেত্রে।
১. ক্যাপাসিটি এবং ব্যবহার
সাধারণত পাওয়ার ব্যাংকের ক্যাপাসিটি নির্ণয় করার একক হল মিলি এম্পিয়ার বা mAh (এমএএইচ)। পাওয়ার ব্যাঙ্ক কেনার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যেন স্মার্টফোনের ব্যাটারির থেকে পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারির ক্যাপাসিটি যেন কমপক্ষে দ্বিগুণ হয়।
আপনার ব্যবহৃত স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্যাপাসিটি যদি চার হাজার এম্পিয়ার হয় তাহলে পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারির ক্যাপাসিটি কমপক্ষে ১০ হাজার এম্পিয়ার কিনতে হবে। যাতে পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করে আপনি আপনার স্মার্টফোন কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার সম্পূর্ণ চার্জ করতে পারেন। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, পাওয়ার ব্যাংকের কারেন্ট রেটিং এবং আপনার স্মার্টফোনের কারেন্ট রেটিং যেন একই হয়। তা না হলে স্মার্টফোনের ব্যাটারির সমস্যা হতে পারে।
২. USB চার্জিং কানেক্টিভিটি
পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেবেন পাওয়ার ব্যাংকে ইউএসবি চার্জিং কানেক্টিভিটি রয়েছে কিনা। উন্নত মানের পাওয়ার ব্যাংকের সঙ্গে বিল্ড ইন usb পোর্ট থাকে। পাওয়ার ব্যাংক একবার সম্পূর্ণ চার্জ দেওয়ার পরে পাওয়ার ব্যাংকের ইউএসবি ক্যাবলের মাধ্যমে ফোন বা অন্য কোন ডিভাইস চার্জ করতে পারেন, সেই বিষয়ে ভালোভাবে খেয়াল রাখুন।
৩. LED ইন্ডিকেটর
এলইডি ইন্ডিকেটর ব্যবহার করার মাধ্যমে পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারির লেভেল নির্ণয় করা যায়। একটি উন্নত মানের পাওয়ার ব্যাংকের সাধারণত দুইটি এলইডি ইন্ডিকেটর থাকে। একটি সাধারনত পাওয়ার ব্যাংক চার্জ করার সময় লাল রং জ্বলে থাকে। অন্য এলইডি লাইটটি আপনার ডিভাইস চার্জের সময় হলুদ অথবা কমলা রং জ্বলে থাকবে এবং আপনার ডিভাইস চার্জ শেষ হলে সবুজ রঙ্গে জ্বলে উঠবে।
পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় অবশ্যই পরীক্ষা করে নিবেন আপনার পাওয়ার ব্যাংকের এলইডি লাইট গুলো সঠিকভাবে বা ঠিকঠাক আলোর সংকেত দিচ্ছে কি না।
৪. ব্যাটারীর ধরন
প্রতিনিয়ত বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি বাজে ব্যাটারি দিয়ে , উন্নত কোম্পানিগুলোর নাম ব্যবহার করে কিছু ভুয়া পাওয়ার ব্যাংক বাজারে সরবরাহ করে যাচ্ছে। উক্ত পাওয়ার ব্যাংকগুলোর ব্যাটারির কন্ডিশন খুবই খারাপ দেওয়া থাকে।
তাই পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় আমাদের অবশ্যই ব্যাটারির ধরন গুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য করতে হবে। উন্নত মানের পাওয়ার ব্যাংকগুলো লিথিয়ম পলিমার ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকে। মূলত লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি দ্বারা তৈরিকৃত পাওয়ার ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন কার্যক্ষম থাকে এবং নির্বিচ্ছিন্নভাবে সার্ভিস প্রদান করে থাকে।
তাই পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় অবশ্যই ব্যাটারির ধরণের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করে তার পরই পাওয়ার ব্যাংক কিনবেন।
৫. পাওয়ার ব্যাংকের অ্যাম্পিয়ার
পাওয়ার ব্যাংক কেনার পূর্বে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিবেন। তা না হলে আপনার পাওয়ার ব্যাংকটি বেশি দিন লাস্টিং করবে না। পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় অবশ্যই কমপক্ষে ২.১ কাউন্টের পাওয়ার ব্যাংক কিনুন।
পাওয়ার ব্যাংক ক্রয় করার সময় যদি দেখেন আপনার পাওয়ার ব্যাংকের কাউন্ট নম্বর উল্লেখিত নম্বর এর চেয়ে কম অথবা বেশি হয় তাহলে সেটি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন।
পাওয়ার ব্যাংকের সুরক্ষায় সাবধানতা
পাওয়ার ব্যাংক কিনে ব্যবহারের পাশাপাশি যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। পাওয়ার ব্যাংকের যত্ন না নিলে সেটা থেকে বেশি দিন ভালো সার্ভিস আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহারের পাশাপাশি যে বিষয়গুলোর উপর যত্ন নিলে ভালো সার্ভিস পাওয়া যাবে সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো।
- পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহারের পর যে স্থানে রাখবেন সেই স্থানের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে যেন না উঠে। এর উপরে তাপমাত্রা উঠলে আপনার পাওয়ার ব্যাংকের আয়ু চিরতরের জন্য শেষ হয়ে যেতে পারে।
- কিছু কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যেগুলো দ্রুত ব্যাটারি ড্রেইন করে, সেগুলো জার্নিতে থাকাকালীন ব্যবহার করবেন না। উল্লেখযোগ্য কিছু অ্যাপ্লিকেশন হলো গুগল ম্যাপ, ভয়েস অ্যাপ imo, viber ইত্যাদি।
- তাছাড়াও জার্নিতে থাকাকালীন মুভি দেখা এবং হেডফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারেন।
আপনার স্মার্টফোন যতবার চার্জ দিবেন, পাওয়ার ব্যাংকের চার্জও তত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে আসবে। তাই অনেক দূরের জার্নিতে গেলে উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। তাহলেই আপনার পাওয়ার ব্যাংকের চার্জ ফুরিয়ে আসবে না এবং জরুরি মুহূর্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
আজকের আর্টিকেলে আমরা পাওয়ার ব্যাংক কি এবং পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর লক্ষ রাখতে হবে তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি। পরবর্তী আর্টিকেল আপনারা কোন বিষয়ে জানতে আগ্রহী তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
তো আজকের আর্টিকেল এখানেই শেষ করছি। আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য কতটা হেল্পফুল হয়েছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং এই বিষয়ে আপনার বন্ধুদের জানার সুবিধার্থে আপনার টাইম লাইনে এটি শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে।